নাশপাতি চাষ/ Pear cultivation

ভূমিকাঃ

নাশপাতি বিদেশি ফল। এর ইংরেজি নাম Pear. এটি মূলত শীতপ্রধান অঞ্চলের ফল। গাছ ১২ থেকে ২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। শীতে পাতা ঝরে। গ্রীষ্মে একসঙ্গে ফুল ও পাতা আসে। ফুলের রং সাদা, ডালের যেকোনো প্রান্তে গুচ্ছবদ্ধভাবে ফোটে। এশিয়ায় নাশপাতির প্রায় ২০ রকম আবাদি জাত বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে প্রধান উৎপাদক দেশ চীন ও জাপান। বর্তমানে বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক ভাবে নাশপাতির চাষ করা হচ্ছে।   

চাষ করার পদ্ধতিঃ

বাংলাদেশে বর্তমানে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এবং সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চলে নাশপাতির চাষ হচ্ছে। তবে দেশের অন্যান্য স্থানের যে কোনো উঁচু ও ঢালু জমিতে এর চাষ করা সম্ভব। এর ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ থাকলেও পাকা অবস্থায় হালকা হলুদ থেকে খয়েরী জাতটি আমাদের দেশে বেশি সহজলভ্য। পৃথিবীতে নাশপাতির অনেক জাত থাকলেও বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বারি নাশপাতি-১ জাতের চাষই অধিক উপযোগী। সাধারণত গুটিকলমের মাধ্যমে নাশপাতির বংশবিস্তার করা হয়। আবার জংলি নাশপাতিগাছের চারা তৈরি করে তাতে ভালো জাতের নাশপাতির চোখ কলম করে চারা তৈরি করা হয়। এতে ফলন ভালো হয়। চট্টগ্রাাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র এবং হর্টিকালচার সেন্টারে নাশপাতির চারা পাওয়া যাবে। চারা রোপণের জন্য ২ ফুট দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ ও ২ ফুট গভীর গর্ত করতে হবে। এ গর্তে ১০ থেকে ১৫ কেজি পচা গোবর সার প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া ২৫০ গ্রাম সুপার ফসফেট, ২৫০ গ্রাম পটাশ মিশিয়ে দিলে ভালো ফল পাওয়া যবে। সব সার মাটির সঙ্গে ভালোভাবে মিশানোর পর ৭ থেকে ১০ দিন রেখে দিতে হবে। মে থেকে আগস্ট চারা রোপণের জন্য উত্তম সময়। জমিতে ১০ ফুট ব্যবধানে চারা রোপণ করতে হয়। এরপর গাছ বড় হওয়ার পর সঠিক সময়ে এতে ফল আসা আরম্ভ করবে। সঠিক সময়ের আগে ফল তুললে টক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই ফল সংগ্রহের সঠিক সময় সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নাশপাতি একটি উচ্চমানের পুষ্টগুণসম্পন্ন ফল। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘বি’ রয়েছে। এছাড়াও শ্বেতসার, প্রোটিন, চর্বি, লৌহ, ফসফরাস ইত্যাদির পর্যাপ্ত উপস্থিতি রয়েছে।

পরিচর্যা

নাশপাতি গাছের ডগা ছাঁটাই করা আবশ্যক। ছাঁটাই না করলে ডালপালার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় না এবং ডালগুলো চিকন ও লম্বা হয়ে উপরের দিকে বড় হতে থাকে। যার ফলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় না। গাছের উচ্চতা ২ থেকে ৩ মিটার হওয়ার পর প্রথম ডগা কেটে ফেলতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে গাছের গোড়ায় ২ থেকে ৩ দিন পর পর সেচ দিতে হয়। এতে গাছের বৃদ্ধি হয় এবং ফলন বাড়ে।  এক ধরনের পোকা কচি নাশপাতি ছিদ্র করে তার ভেতরে প্রবেশ করে। যা নাশপাতি নষ্ট করে ফেলে। নাশপাতিতে পোকার আক্রমণ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে ম্যালাথিয়ন জাতীয় কীটনাশক পানির সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করলে পোকার আক্রমণ থেকে নাশপাতিকে রক্ষা করা সম্ভব। এছাড়া কাঠবিড়ালী এবং কোনো কোনো প্রজাতির পাখি নাশপাতি খেয়ে থাকে। এর থেকে বাঁচতেও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আয়ঃ

নাশপাতি একটি সম্ভাবনাময়ী ফসল। এইফলের উৎপাদন বাড়লে অনেকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। আর চাষিরা এই ফলের চাষ করে হয়ে উঠতে পাড়েন স্বাবলম্বী। শুধু দেশেই নয় বরং দেশের বাইরেও নাশপাতি রপ্তানি করে লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।

শুভ কামনা রইল।

English version.

Pear cultivation

Introduction:

Pear is an exotic fruit. Its English name is Pear. It is mainly a fruit of cold regions. The tree can be 12 to 20 meters tall. Leaves fall in winter. Flowers and leaves come together in summer. The flowers are white, clustered at either end of the stem. About 20 cultivars of pear are cultivated commercially in Asia. The main producing countries are China and Japan. Currently, pears are being cultivated internationally in Bangladesh as well.

Cultivation method:

In Bangladesh, pears are currently being cultivated in the hilly areas of Chittagong, Rangamati, Bandarban, Khagrachari and Sylhet. However, it can be cultivated in any high and sloping land in other parts of the country. Although its fruit is green when raw, it is light yellow when ripe, but the  light brown variety is more readily available in our country. Although there are many varieties of pear in the world, the cultivation of Bari pear-1 variety is more suitable in the climate of Bangladesh. Pear propagation is usually done by cuttings. Again by making seedlings of wild pear trees, seedlings are made by grafting the eyes of good varieties of pears. It gives good yield. Pear seedlings are available at Agricultural Research Centers and Horticulture Centers in Chittagong and Chittagong Hill Tracts. A hole of 2 feet length and width and 2 feet depth should be made for planting seedlings. 10 to 15 kg of rotted cow dung should be applied in this hole. Besides, if you mix 250 grams of super phosphate, 250 grams of potash, you can get good results. All fertilizers should be left for 7 to 10 days after mixing well with the soil. May to August is the best time for planting. Seedlings should be planted at 10 feet intervals in the land. Then after the tree grows up it will start bearing fruit at the right time. Picking the fruit before the right time is likely to turn sour. So care should be taken regarding the right time of fruit collection. Pears are a highly nutritious fruit. It contains a lot of vitamins ‘A’ and ‘B’. There is also adequate presence of protein, protein, fat, iron, phosphorus etc.

Care:

Pear tree tips must be pruned. If not pruned, the number of branches does not increase and the branches grow thin and long upwards. As a result, the desired yield is not obtained. The first tip should be cut after the height of the tree is 2 to 3 meters. During the dry season, the root of the plant should be irrigated every 2 to 3 days. It increases plant growth and yields. A type of insect penetrates the young pear by piercing it. Which destroys pears. It is possible to protect pears from insect attack by spraying Malathion type insecticide mixed with water as soon as insect attack appears on pears. In addition, squirrels and some species of birds eat pears. Adequate measures should be taken to avoid this.

Income:

Pears are a promising crop. If the production of this fruit increases, employment will be created for many people. And farmers can become self-sufficient by cultivating this fruit. It is possible to earn lakhs of rupees by exporting pears not only in the country but also outside the country.

Best wishes.