ভূমিকাঃ
আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে ছায়াযুক্ত স্যাঁতসেঁতে জায়গায় ছাতার আকৃতির সাদা রংয়ের এক ধরনের ছত্রাক জন্মাতে দেখা যায়। যা ব্যাঙের ছাতা বলে পরিচিত। আগাছার মতো যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা এসব ছত্রাক খাবার উপযোগী নয় ঠিকই তবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষের মাধ্যমে যে ব্যাঙের ছাতা উৎপাদন করা হয় তা অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সারা বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয়। যাকে আমরা ইংরেজি নাম মাশরুম হিসেবেই চিনি। আমাদের দেশে বর্তমানে ধীরে ধীরে মাশরুমের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এর চাষের মাধ্যমে অধিক লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চাষ পদ্ধতিঃ
বাংলাদেশে গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালে স্ট্র মাশরুম এবং শীতকালে ওয়েস্টার জাতের মাশরুম চাষ উপযোগী। বর্তমানে এ দেশে কিং ওয়েস্টার, বাটন, শিতাকে, ইনোকি, মিল্কী হোয়াইট, স্ট্র ইত্যাদি জাতের মাশরুম চাষ করা হচ্ছে। মাশরুম চাষের জন্য খড়ের বেডের ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে ২ ধাপে কাজ সম্পন্ন করা হয়। প্রথম ২০ দিন ওমঘরে এবং পরবর্তীতে ৪৫ দিন পর্যন্ত ফসল উৎপাদনের জন্য চাষঘরে রাখা হয়। এসময়ে উভয় স্থানেই যথাযথভাবে পরিবেশের নিয়ন্ত্রন করতে হবে। মাশরুম চাষা করতে প্রয়োজন বীজ, ধানের খড়, পাতলা পলিথিন ব্যাগ, বাঁশ, ছিদ্রযুক্ত কালো পলিথিন সিট, ঘরের উষ্ণতা ও আদ্রর্তা পরিমাপের জন্য হাইগ্রোমিটার, ঘরের উষ্ণতা ও আদ্রর্তা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য হ্যান্ড সপ্রেয়ার, জীবাণুনাশক, ব্লেড বা ছোট ছুরি, বালতি এবং অন্যান্য আনুসাঙ্গিক উপকরণ। বীজ প্যাকেট প্রস্তুত করার জন্য সাদা মাইসেলিয়াম সমৃদ্ধ মাশরুমের বীজ প্যাকেটের মুখ বন্ধ থাকলে এর রাবার ব্যান্ড, কাগজ, তুলা ও প্লাস্টিক নেক খুলে আলাদা করে আবার প্যাকেটের মুখটি শুধু রাবার ব্যান্ড দিয়ে পেঁচিয়ে ভালোভাবে আটকাতে হবে। তারপর কম্পোস্ট প্যাকেটের উপরের দুপাশে ব্লেড দিয়ে গোলাকার আকৃতি করে ৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার পলিথিন ব্যাগ কেটে ফেলতে হবে। কাটা অংশে চা চামচ দিয়ে ১ সে.মি. গভীর করে কম্পোস্ট চেঁছে ফেলতে হবে। একে মাশরুম উৎপাদনের জন্য উদ্দিপ্তকরণ বলে। কম্পোস্ট প্যাকেট গুলো এবার একটি সুবিধামত পাত্রে পরিষ্কার পানিতে ৩০ মিনিট পর্যন্ত ডুবিয়ে রাখতে হবে। পানির পাত্র থেকে প্যাকেটগুলো উঠিয়ে পরিষ্কার স্থানে ৩০ মিনিট পর্যন্ত উল্টো করে রাখতে হবে যাতে প্যাকেটের বাড়তি পানি ঝরে পড়ে যায়। এভাবে কম্পোস্ট প্যাকেটগুলো মাশরুম চাষের জন্য প্রস্তুত করা হয়। মাশরুম উৎপাদনের ঘরে মাচার উপর প্রয়োজন অনুযায়ী একটি ভেজা পলিথিন বিছিয়ে কম্পোস্ট প্যাকেটগুলো মাচার উপর রাখতে হবে এবং অন্য একটি পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এ অবস্থায় প্যাকেটগুলোকে ২ থেকে ৩ দিন ঢেকে রাখতে হবে। তবে প্রতিদিন ৩ বার প্যাকেটের উপরের ঢাকনা ১০ মিনিট পর্যন্ত সরিয়ে রাখতে হবে যাতে এ সময় বাতাস চলাচল করতে পারে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে পলিথিনের উপরে পানি স্প্রে করতে হবে অথবা ঘরের ভেতরের চারপাশে চট ভিজিয়ে রাখতে হবে।
মাশরুমের পরিচর্যাঃ
বীজ বপনের পর থেকে গজানোর আগ পর্যন্ত তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর মধ্যে রাখতে হবে। মাশরুম গজাতে শুরু করলে তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর মধ্যে রাখতে হবে। অবস্থার প্রেক্ষিতে তাপ বাড়িয়ে কমিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মাশরুম বেডকে পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে হবে। বেড যাতে সব সময় ভেজা থাকে সেজন্য মাঝে মাঝে হালকাভাবে পানি ছিটিয়ে আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
সংগ্রহ এবং সংরক্ষণঃ
বেডে বীজ বপনের ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে মাশরুম গজানোর শুরু করে। মাত্র ২ দিনের মধ্যে এ অবস্থা পেরিয়ে পরিপূর্ণ রুপ ধারণ করে। যা মাশরুম সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। সংগ্রহ করতে বেশি দেরী করলে এটি ছাতার মতো ফুটে যাবে যার ফলে এর স্বাদ নষ্ট হয়ে যাবে। একটি বেড থেকে ২ সাপ্তাহ পর্যন্ত মাশরুম সংগ্রহ করা যাবে। পরে আবার বেড পরিষ্কার করে নতুন করে মাশরুম চাষ করা যাবে। মাশরুম তাজা অবস্থায় খাওয়া ভালো। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় বেশিদিন ভালো থাকে না তবে ফ্রিজে প্রায় এক সাপ্তাহ সংরক্ষণ করা যাবে। আবার রোদে শুঁকিয়ে বা রাসায়নিক উপায়ে টিন জাত করে বহুদিন সংরক্ষণ করা যায়।
আয়ঃ
মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। যা সব্জি বা সালাদ হিসেবে খাওয়া যায়। শুধু তাই নয় নানা ধরণের খাবারের সাথে এটি যোগ করে খাবারের স্বাদ এবং পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করা হয়। বর্তমানে এর অনেক চাহিদা রয়েছে। তাই বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম উৎপাদন করে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। শুধু তাই নয় দেশের বাহিরে রপ্তানি করেও লাভবান হওয়া সম্ভব।
শুভ কামনা রইল।
English version.
Mushroom cultivation
Introduction:
In rural areas of our country, a type of umbrella-shaped white fungus can be seen growing especially in shady damp places. Which is known as frog umbrella. Although these fungi that grow like weeds are not edible, but the frog umbrellas that are produced through scientific methods of cultivation are very nutritious and very popular all over the world. Which we know as mushroom in English. Due to the increasing popularity of mushroom in our country, there is a possibility of more profit through its cultivation.
Cultivation method:
In Bangladesh, straw mushroom is suitable for summer and monsoon season and wester mushroom in winter. At present, king wester, button, shiitake, inoki, milky white, straw etc. varieties of mushrooms are being cultivated in this country. Straw beds are used for mushroom cultivation. In this case, the work is done in 2 steps. First 20 days are kept in store room and later for 45 days in paddy for crop production. At this time, the environment must be properly controlled in both places. Mushroom cultivation requires seeds, paddy straw, thin polythene bag, bamboo, perforated black polythene seat, hygrometer to measure the temperature and humidity of the room, hand sprayer to control the temperature and humidity of the room, disinfectant, blade or small knife, bucket and other accessories. . To prepare the seed packet, if the mouth of the white mycelium mushroom seed packet is closed, its rubber band, paper, cotton and plastic neck should be opened and separated, and the mouth of the packet should be twisted only with a rubber band and closed well. Then 3 to 4 cm polythene bag should be cut by making a round shape with the blade on both sides of the top of the compost packet. 1 cm with a teaspoon in the cut part. Compost must be sieved deeply. This is called stimulation for mushroom production. The compost packets should be immersed in clean water for 30 minutes in a convenient container. Remove the packets from the water container and keep them upside down in a clean place for 30 minutes so that the excess water in the packets falls off. Thus compost packets are prepared for mushroom cultivation. Compost packets should be placed on the mat and covered with another polythene by spreading a wet polythene on the mat in the mushroom production house as required. In this condition, the packets should be covered for 2 to 3 days. The upper lid of the packet should be removed for 10 minutes 3 times a day so that air can circulate during this time. If the temperature rises, water should be sprayed on the polythene or it should be soaked around the inside of the house.
Care of mushrooms:
The temperature should be maintained between 35 and 45 degrees Celsius after sowing till germination. The temperature should be kept between 30 and 35 degrees Celsius when the mushroom starts to grow. Depending on the condition, the heat should be increased or decreased. Mushroom beds must be protected from insect infestation. Humidity should be controlled by sprinkling water lightly from time to time so that the bed remains wet at all times.
Collection and Storage:
Mushrooms start growing within 10 to 15 days of sowing the seeds in the bed. In just 2 days this condition is passed and takes full form. Which is the perfect time to pick mushrooms. If it is too late to collect it will rot like an umbrella, thereby losing its flavour. Mushrooms can be harvested from one bed for up to 2 weeks. Later, the bed can be cleaned and new mushroom cultivation can be done. Mushrooms are best eaten fresh. It does not last long at room temperature but can be stored in the fridge for about a week. Again it can be preserved for many days by drying it in the sun or by chemically tinning it.
Income:
Mushrooms are a very nutritious food. Which can be eaten as a vegetable or salad. Not only this adding it to various types of food increases the taste and nutritional value of the food. It is currently in high demand. So it is possible to make more profit by producing mushrooms commercially. Not only that, it is also possible to profit by exporting outside the country.
Best wishes.