ভূমিকাঃ
কাজু বাদাম একটি অত্যন্ত সুস্বাদু এবং উপকারী ফল। একসময় এটি আমদানি করে দেশে আনা হতো। তবে বর্তমানে বাংলাদেশেই এর চাষাবাদ করা হয়। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকাগুলোতে এর ফলন ভালো হয়। এজন্য জুম চাষিরা বর্তমানে কাজু বাদাম চাষের দিকে বেশি ঝুঁকছে।
স্থানীয় ভাষায় ‘তাম’ বা কাজু বাদাম দামি ফল হিসেবে পরিচিতি সবার কাছে। আমদানি নির্ভর এ ফলটি নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে পাহাড়ে। বাধা শুধু সংরক্ষণে সমস্যা আর পোস্ট প্রসেসিং বা উৎপাদনের পর খাওয়ার উপযোগী করে প্রস্তুতকরণে। উৎপাদন ও চাষাবাদ যে হারে বাড়ছে তাতে খুব শিগগিরই পাহাড়ে কাজু ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কোথায় ভালো উৎপাদন হয়ঃ
বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় অন্য ফসলের পাশাপাশি ব্যাপকহারে বেড়েছে কাজু বাদামের চাষ। পাহাড়িরা যে চাষাবাদে লাভ বেশি সেটাতে ঝোঁকেন বেশি। এমনকি জমিতে অন্য ফসল থাকলেও তা কেটে নতুন অর্থকরী ফসলে মনোযোগ দেন। ৪০-৫০ বছর ধরেই বান্দরবানের পাহাড়ে কাজু চাষ হচ্ছে। তবে বাণিজ্যিক চাষাবাদ বেড়েছে সম্প্রতি। বিশেষ করে সবশেষ দুই বছর। পাহাড়ি মাটি, আবহাওয়া সবই কাজু বাদাম চাষের বিশেষ উপযোগী। তাছাড়া পরিচর্যা ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় অতিরিক্ত কোনো খরচ নেই। আর আগে দাম না পাওয়ার যে বিষয়টি ছিল সেটি এখন নেই। ২০১৬ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রপ্তনিযোগ্য অগ্রাধিকার কৃষিপণ্য হিসেবে কাজু বাদাম চাষে গুরুত্ব দেয়। তখন সচেতনতামূলক সেমিনারও করা হয়। এতে মন্ত্রণালয়ের সচিবও উপস্থিত ছিলেন। এরপর থেকে এলাকার মানুষের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে থাকে। তারা কাজু বাদাম চাষের প্রতি উদবুদ্ধ হন। যে বাদাম আগে মণপ্রতি ১ হাজার টাকা বিক্রি হতো তার দাম গিয়ে ঠেকে ৪ হাজারে।
উৎপাদনের সময়ঃ
‘বর্তমানে রুমা আর থানচি উপজেলায় বেশি পরিমাণ কাজুর চাষ হচ্ছে। জুম চাষিরা আগে একটি পাহাড় পরিষ্কার করলে পরে কয়েকবছর আর সে জমিতে চাষ করতে পারতো না। তবে বর্তমানে তারা ওইসব জমিতে কাজু বাদাম চাষ করছেন। এতে তারাও লাভবান হচ্ছে। এখন প্রায় ৫শ হেক্টর বা তারও বেশি জমিতে চাষ হচ্ছে। বীজ থেকে চারা হয়। চারা লাগানোর তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ফল ধরে। ফেব্রুয়ারি-মার্চে ফুল ধরে। ফল সংগ্রহ করা হয় মে মাসে।
প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণঃ
এই কাজু সাধারণ মানুষকে কিনতে হয় কেজিপ্রতি ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা দরে। এর কারণ কাজু বাদামের মূল চ্যালেঞ্জ পোস্ট প্রসেসিং ও সংরক্ষণ। আমাদের দেশে কোনো মেশিন নেই, যাতে পোস্ট প্রসেসিংয়ের কাজ করা যায়। তাছাড়া সংরক্ষণও কেউ ঠিকমতো জানতো না।
কাজু এমন একটি ফল যেটি কাঁচা বেশি খেতে পারবেন না। ফলটি হয় দুই স্তরে। উপরের অংশটুকু মোটা। নিচের অংশে বাদাম। এর ভিতরে এক ধরনের আঠাজাতীয় জিনিস থাকে। এটা মুখে বা হাতে লাগলে ঘা হতে পারে। আবার উপরের অংশটি প্রসেস করতে পারলে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল পাওয়া সম্ভব।
রোগ-বালাইও কম। আর একটি গাছে জাতভেদে প্রায় ৪০ কেজি পর্যন্ত বাদাম হয়। সাধারণত পেকে নিচে পড়ে গেলে সংগ্রহ করে শুকানো হয়। আর শুকালে ১ বছর রাখা সম্ভব। পোস্ট প্রসেসিংয়ের কাজ করা যায় না বলে পাইকাররা ভারত, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করেন। আবার প্রসেসিং হয়ে আমাদেরেই এগুলো কিনতে হয় কয়েক গুণ বেশি দামে। তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বাদাম চাষে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন।
উপকারিতাঃ
বেশিরভাগ সময় ক্যান্সার সেলের খোঁজ পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন প্রতিদিন এক মুঠো করে কাজু বাদাম খাওয়ার। কাজু বাদমে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সার সেলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। কাজু বাদামে প্রম্যান্থোসায়ানিডিন উপাদানটি থাকায় ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
কাজু বাদামে পর্যাপ্ত পরিমাণে জিঙ্ক থাকায় যে কোন ভাইরাসের আক্রমণের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করতে পারে। এই ধরনের সংক্রমনের ইনফেকশন থেকে শরীরকে নিরাপদ রাখতে পারে প্রাকৃতিক এই উপাদানটি। এ বাদামে রয়েছে ওলিসিক নামক এক ধরনের মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, যা দেহের বাজে কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে দারুন কাজে আসে। শরীর ফিট রাখতে প্রতিদিন সামান্য পরিমাণ হলেও কাজু বাদাম খাওয়া উত্তম। এটি শরীরের এইচ,ডি,এল বাড়িয়ে তোলে এবং এল,ডি,এল নিয়ন্ত্রণে রাখে।
রক্তে সুগারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ ও ডায়াবেটিস সংক্রান্ত স্বাস্থ্য ঝুঁকি বহুল প্রচলিত একটি সমস্যা। এ ধরণের সমস্যা নিয়ন্ত্রনে রাখতে প্রতিদিন এক মুঠো কাজু বাদামেই যথেষ্ঠ। এ বাদামে ফ্যাটস, ভিটামিন, মিনারেলস উপাদান উপস্থিত থাকায় শরীরে গ্লুকোজের ভারসাম্য রক্ষা করে।
মস্তিষ্কের জন্য একটি অন্যতম সেরা খাদ্য হল কাজু বাদাম। ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ কাজু বাদাম মস্তিষ্কের কার্যক্রম সঠিক রাখতে ও স্মরণশক্তি বাড়াতে খুব সাহায্য করে এবং উপস্থিত জিঙ্ক উপাদান ও মিনারেল মস্তিষ্কের সেল ড্যামেজ থেকে রক্ষা করে।
কাজু বাদামে উপস্থিত ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড়ের সুষ্ঠ গঠন নিশ্চিত করে। মজবুত ও শক্তিশালী হাড় গঠন করতে কাজু বাদামের সাথে অন্য কোন কিছুর তুলনা হয়না। তাছাড়া বাদামের উষ্ণ তেল মালিশে বাচ্চার দেহের হাড় মজবুত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
শুভ কামনা রইল।
English version
Cashew nut cultivation
Introduction:
Cashew nut is a very tasty and beneficial fruit. Once it was imported and brought to the country. However, it is currently cultivated in Bangladesh. Its yield is especially good in hilly areas. That is why the jum farmers are currently more inclined towards cashew nut cultivation.
In the local language ‘Tam’ or cashew nut is known as an expensive fruit to everyone. This import-dependent fruit is showing new dreams in the hills. Barriers are only problems in storage and post-processing or preparation for consumption after production. With the increasing rate of production and cultivation, it is possible to build a cashew industry in the hills very soon.
Well production area:
Along with other crops, cashew nut cultivation has increased in different areas of Bandarban. Hill people are more inclined towards farming which is more profitable. Even if there are other crops on the land, he cuts them and concentrates on new cash crops. Cashews are being cultivated in the hills of Bandarban for 40-50 years. However, commercial cultivation has increased recently. Especially the last two years. Hilly soil, climate are all suitable for cashew nut cultivation. Moreover, there are no additional costs as maintenance and production costs are low. And the issue of not getting the price earlier is no more. In 2016, the Ministry of Commerce gave importance to cashew nut cultivation as a priority agricultural commodity for export. An awareness seminar was also conducted then. The secretary of the ministry was also present in it. Since then, there has been a massive change in the people of the area. They were inspired to cultivate cashew nuts. The price of almonds which used to be sold at Tk 1,000 per maund has gone down to Tk 4,000.
Production time:
Currently, more cashews are being cultivated in Ruma and Thanchi upazilas. If the Jhum farmers cleared a hill first, they could no longer cultivate that land for several years. But currently they are cultivating cashew nuts in those lands. They are also benefiting from it. Now about 500 hectares or more is being cultivated. Seedlings grow from seeds. It bears fruit within three to four years of planting. Flowers in February-March. The fruits are collected in May.
Processing and Storage:
Common people have to buy this cashew at the rate of 1000 to 2000 taka per kg. This is because the main challenge of cashew nuts is post processing and storage. There are no machines in our country to do post processing. Moreover, no one knew the conservation properly.
Cashew is one fruit that cannot be eaten raw. The result is twofold. The upper part is thick. Nuts at the bottom. It has a kind of sticky substance inside. It can cause sores if applied to the mouth or hands. If you can process the upper part again, it is possible to get a lot of vitamins and minerals.
Diseases are less. Another tree produces about 40 kg of nuts depending on the variety. Usually when the ripe fruit falls down it is collected and dried. And it is possible to keep it for 1 year in dry season. Wholesalers export to India, Thailand, Indonesia, Vietnam etc. as post processing work cannot be done. After processing, we have to buy them at several times higher prices. Therefore, the Ministry of Commerce is giving special importance to almond cultivation.
Benefits:
Cancer cells are often difficult to detect. So doctors advise to eat a handful of cashew nuts every day. Cashew nuts are rich in antioxidants, which help build the immune system against cancer cells. Cashew nut contains promanthocyanidin, which plays a special role in preventing cancer.
Cashew nuts contain enough zinc to protect the body from any viral attack. This natural ingredient can keep the body safe from such infections.
These nuts contain a type of monounsaturated fatty acid called oleic acid, which is great for reducing bad cholesterol levels in the body. It is good to eat cashew nuts in small quantity every day to keep the body fit. It increases HDL in the body and keeps LDL under control.
Blood sugar control and the health risks associated with diabetes are a common problem. A handful of cashew nuts every day is enough to keep this kind of problem under control. Due to the presence of fats, vitamins, minerals in this nut, it protects the balance of glucose in the body.
One of the best brain foods is cashew nuts. Rich in vitamin-E, cashew nuts are very helpful in maintaining proper brain function and improving memory, and the zinc content and minerals present protect against brain cell damage.
Calcium and phosphorus present in cashew nuts ensure healthy bone formation. Nothing compares to cashew nuts for building strong and strong bones. Moreover, warm almond oil massage has a special role in strengthening the bones of the baby’s body.
Good luck.